ঢাকা,রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে একরামের স্ত্রীকে ফোন

কাদের বললেন দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক :

দেশে-বিদেশে আলোচিত বন্দুকযুদ্ধের আট দিন পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফোন এসেছে নিহত টেকনাফের কাউন্সিলর একরামুলের স্ত্রী আয়েশা বেগমের কাছে। গতকাল রবিবার বিকেল ৫টার দিকে আয়েশা একটি ফোন পান। ফোনকারী নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে আয়েশা বেগমকে বলেন, তাঁর (আয়েশা) সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করে ঘটনার বিস্তারিত জেনে নেওয়া হবে। গত রাত পৌনে ৮টার দিকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে একরামুলের স্ত্রী কালের কণ্ঠকে এই ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে একরামুল হক নিহত হওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘তদন্তে একরাম নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাঁকে যারা দোষী সাব্যস্ত করেছে, তারাই দোষী সাব্যস্ত হবে। তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া হবে। একরাম কে—এ প্রশ্নের জবাব চাই। তিনি আমাদের যুবলীগের সভাপতি। আমাদের লোক আমরা মেরে ফেলব?’ গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মেট্রো রেল-৬-এর প্যাকেজ-৭-এর চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকরা একরামুল হকের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন করলে সড়কমন্ত্রী এ প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রাখতে হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও বলেছেন, কোনো হত্যাকাণ্ডই তদন্তের বাইরে নয়। কেউ নিহত হওয়াটাও কাম্য নয়। একরাম নিহত হওয়ার ঘটনায় তদন্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া তিনি জানিয়েছেন মাদকবিরোধী অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত অডিও হাতে পেয়েছেন। ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তদন্ত চলছে।

তিন দিন ধরে একরামের স্ত্রী আয়েশা বেগম দুই মেয়ে তাহিয়া ও নাহিয়ানকে নিয়ে চট্টগ্রামে মায়ের ভাড়া বাসায় রয়েছেন। পরিবারটি এখনো শোকে মূহ্যমান। বাবার জন্য কাঁদতে কাঁদতে অষ্টম শ্রেণি ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই মেয়ে এখনো শয্যাশায়ী বলে জানিয়েছেন আয়েশা বেগম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে যিনি রিং করে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁর নাম-পরিচয় মনে নেই। তবে ঘটনা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্য আবারও ফোন করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।’

একরামুলের স্ত্রী জানান, গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাও ফোন করে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয় ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে তাঁর (আয়েশা) সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে। জানা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একরামুলের স্ত্রীর যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। একরামুলের জ্যেষ্ঠ ভাই নজরুল ইসলামও গতকাল কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফোন করার জন্য তাঁর কাছ থেকে একরামুলের স্ত্রী আয়েশার মোবাইল নাম্বার চেয়ে নেওয়া হয়।

গতকাল একরামুলের স্ত্রী কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘ভাই রে আমি কী করব? কমিশনার (একরাম) তো যাওয়ার সময় আমাকে একটি টাকাও দিয়ে যাননি। আমি আমার দুই কন্যা নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব? কী খাব, কিভাবে পড়ালেখা করাব ওদের?’

মাদকবিরোধী অভিযান বন্ধে আন্তর্জাতিক চাপ আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সড়কমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করব না। জাতিসংঘের অবজারভেশন করার অধিকার আছে, তারা অবজারভেশন করুক। যেকোনো বিদেশি বন্ধু দেশও প্রয়োজন আছে মনে করলে অবজারভেশন করতে পারে। তবে মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য যত দিন প্রয়োজন হবে অভিযান চলবে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে অভিযোগ ও নালিশের রাজনীতি। তারা শুধু অভিযোগ করতে জানে, নালিশ করতে জানে। মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এটা তারা সইতে পারছে না।

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, গোয়েন্দাদের তৈরি করা মাদক কারবারিদের তালিকা ধরে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান চালানো হচ্ছে। গোয়েন্দারা এই তালিকা হালনাগাদ করতে থাকবে। আর দেশ থেকে মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান চলবে। আর কোনো হত্যাকাণ্ডই তদন্তের বাইরে নয়। কেউ নিহত হওয়াটাও কাম্য নয়। গতকাল স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে ‘দেশব্যাপী মাদকবিরোধী ফেস্টুন বিতরণ ও উদ্ধুদ্ধকরণ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ও বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘দেশের যুবসমাজ মাদক গ্রহণ করে ধ্বংস হচ্ছে। এই যুবসমাজকে রক্ষা করতে মাদকের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। আমাদের গোয়েন্দা বাহিনী তালিকা তৈরি করেছে। সেই তালিকা ধরে অভিযান চালানো হচ্ছে। কারাগারে ৮৫ হাজার বন্দি রয়েছে, যার ৩৫ শতাংশই মাদক মামলার আসামি।’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গোয়েন্দাদের তালিকা হালনাগাদ হতে থাকবে। আর মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। কাউন্সিলর একরামের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত হচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ‘হ্যাঁ-সূচক’ জবাব দেন।

গতকাল স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি দেয়ালে মাদকবিরোধী পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। সেসবে লেখা মাদকবিরোধী নানা স্লোগান—‘কৌতূহলেও মাদক নেবেন না/পরবর্তীতে কৌতূহল আপনার জীবনে সর্বনাশ ডেকে আনবে’/‘যে মাদক অফার করে সে বন্ধু হতে পারে না’/‘হতাশায় মাদক গ্রহণ কোনো সমাধানের পথ নয়/হতাশায় কখনো মাদক নেবেন না’ ইত্যাদি। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মুহাম্মদ আলী নকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রসচিব (সুরক্ষা সেবা বিভাগ) ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য এ কে এম এনামুল হক শামীম ও স্টামফোর্ড বোর্ড অব ট্রাস্টি চেয়ারম্যান ফাতিনাজ ফিরোজ। কালের কন্ঠ

পাঠকের মতামত: